সুন্দরবন

সুন্দরবন একটি প্রাকৃতিক বিষ্ময়ের নাম। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন বা লবনাক্ত বণাঞ্চল।

সুন্দরবন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন বা লবণাক্ত বণাঞ্চল। সুন্দরবনের মোট আয়তন প্রায় ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার , যা যৌথভাবে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অবস্থিত। সুন্দরবনে বাংলাদেশর অংশ ৬,০১৭ বর্গ কিলোমিটার। খুলনা, সাতক্ষীরা , বাগেরহাট, পটুয়াখালি ও বরগুনা জেলার অংশ নিয়েই বাংলাদেশর সুন্দরবন। ভারতের সুন্দরবন পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা ও উত্তর ২৪ পরগনা জেলা নিয়ে গঠিত। ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে।

দর্শনীয়  স্থান

১। জামতলা সৈকতঃ জামতলায় একটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার রয়েছে, এই টাওয়ার থেকে সুন্দরবনের সৌন্দর্য্যের কিছুটা অংশে একসাথে চোখ বুলানো যায়। আর ভাগ্য থাকলে এখান থেকে হরিণ কিংবা বাঘের দেখা পাওয়া যেতে পারে।

২। মান্দারবাড়িয়া সৈকতঃ মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতের কিছুটা অংশ এখনো অনাবিষ্কৃত বলে মনে করা হয়। এখান থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায়।

৩। হিরণ পয়েন্টঃ হিরণ পয়েন্টের কাঠের তৈরি সুন্দর রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হরিণ, বানর, গুইসাপ ও কুমিরের দেখা পাওয়া যায়।

৪। দুবলার চরঃ সুন্দরবনের মদ্ধ্যে ছোট একটি চর হচ্ছে দুবলার চর। দুবলার চরের মদ্ধ্যে দিয়ে যে চর বয়ে গিয়েছে তা মিশে গিয়েছে বঙ্গপসাগরে।

৫। কটকা বিচঃ কটকা সী বিচের পরিবেশ অত্যন্ত পরিছন্ন ও সুন্দর। এখানে বেলাভূমি জুড়ে আঁকা থাকে লাল কাঁকড়াদের শিল্পকর্ম।

 

যাতায়াত

ঢাকা থেকে সরাসরি খুলনা যাওয়ার বাস, ট্রেন এবং লঞ্চ ব্যবস্থা রয়েছে। ঢাকা থেকে সোহাগ, হানিফ ও ঈগল পরিবহনের বাস নিয়মিতভাবে ভোর ৬ টা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত খুলনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। ভাড়া পড়বে ৬০০-৭০০ টাকা ও এসি বাসের ভাড়া পড়বে ৭০০-১৪০০ টাকা। ঢাকা থেকে সড়ক পথে খুলনা যেতে প্রায় ৮ ঘন্টা লাগে। ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে খুলনা যাবার বিভিন্ন কোম্পানির লঞ্চ রয়েছে। খুলনা থেকে সুন্দরবন হয়ে মংলায় যেতে দূরত্ত পড়বে ৫০ কিলোমিটার। অথবা চাইলে খুলনা থেকে প্রাইভেট গাড়ি বা বাস নিয়েও মংলার উদ্দ্যেশ্যে যাওয়া যায়। মংলা ঘাট থেকে ট্রলার কিংবা লঞ্চ ভাড়া নিয়ে দুই ঘণ্টায় সুন্দরবনের করমজল যাওয়া যায়। রাতে মংলা থাকতে না চাইলে সকাল বেলা খুলনা থেকে মংলা হয়ে সুন্দরবন দেখে সন্ধ্যায় খুলনা ফিরে আসা যাবে।

অথবা ট্রেনে যাওয়ার আনন্দ নিতে চাইলে সকালে সুন্দরবন এক্সপ্রেসে রওনা দিতে পারেন। আর চিত্রা এক্সপ্রেস ছেড়ে যায় সন্ধ্যায়। যার ভাড়া পড়বে ক্লাস অনুযায়ী ৫০৫ টাকা থেকে ১৭৩১ টাকা।

সুন্দরবনে  পর্যটকদের  ফি

১। অভয়ারণ্য এলাকায় দেশি পর্যটকদের জন্য প্রতিদিনের জনপ্রতি ভ্রমণ ফি – ১৫০ টাকা;

ছাত্র-ছাত্রিদের জন্য – ৩০ টাকা;

বিদেশী পর্যটকদের জন্য ভ্রমণ ফি – ১৫০০ টাকা।

২। অভয়ারণ্যের বাইরে দেশি পর্যটকদের ভ্রমণ ফি – ৭০ টকা।

ছাত্র-ছাত্রিদের জন্য – ৩০ টাকা;

বিদেশীদের জন্য – ১০০০ টাকা;

গবেষকদের জন্য ফি – ৪০ টাকা।

৩। করমজলে দেশি পর্যটকদের জন্য ভ্রমণ ফি দিতে হয় – ১৫ হাজার টাকা, এছাড়া নবায়ন ফি বাবদ দিতে হয় ৪ হাজার টাকা।

সুন্দরবন  ভ্রমণের  কিছু  টিপস 

১। সুন্দরবনের অনেক জায়গায় এখনোও মোবাইলের নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না তাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে টেলিটকের সিম রাখা।

২। শীপে উঠার আগে প্রয়োজনীয় সবকিছু নিয়ে উঠুন।

৩। নিরাপদ খাবার পানি সাথে রাখুন।

৪। প্রয়োজনীয় অষুধ এবং প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জামাদি সাথে রাখুন।

৫। শীপ বা প্যাকেজ বুকিং এর আগে সেই এজেন্সী সম্পর্কে ভালো করে জেনে নিন।

৬। কোন শীপ বা লঞ্চ নিয়ে যাবেন তা আগেই বুকিং করে নিন।

৭। অবশ্যই ন্যাশনাল আইডি কার্ডের এক কপি সাথে রাখুন।

৮। ছুটির দিন গুলো এড়িয়ে অন্য দিন গুলোতে প্ল্যান করলে ভিড় কিছুটা কম পাওয়া যাবে।

৯। ট্যুর গাইডের কথা মেনে চলুন।

১০। বনে ঢুকার সময় একসাথে ঢুকুন।

১১। অভিজ্ঞ একজন ট্যুর অপারেটর সাথে রাখুন।

১২। সুন্দরবনে ভ্রমণে নিরাপত্তার জন্য সুদক্ষ ও সশস্র বন প্রহরী সাথে রাখুন।

১৩। পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কিছু থেকে বিরত থাকতে হবে।

রাত্রিযাপন

সুন্দরবনের টাইগার পয়েন্টের কচিখালীতে এবং হিরণপয়েন্টের নীলকলমে রাত্রিযাপন করতে চাইলে দেশী পর্যটকদের জন্য লাগবে প্রতি কক্ষের জন্য তিন হাজার টাকা আর বিদেশী পর্যটকদের গুনতে হবে পাঁচ হাজার টাকা। আর বন বিভাগের রেস্টহাউজ কটকায় রাত্রিযাপন করতে চাইলে পড়বে দেশী পর্যটকদের জন্য দুই হাজার টাকা এবং বিদেশী পর্যটকদের জন্য পাঁচ হাজার টাকা।

এগুলো ছাড়াও খুলনা নগরিতে থাকতে চাইলে বেশ কিছু ভালো মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে যার মদ্ধ্যে উল্লেখযোগ্য হোটেল রয়েল ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল টাইগার গার্ডেন, হোটেল সিটি ইন ইত্যাদি।

Share this tour