চট্টগ্রামের মিরসরাই এর নাপিত্তাছড়া ট্রেইল (Napitta Chora Trail) এর কথা সবাই আগেই জেনেছেন। নাপিত্তাছড়া যেতে হলে মিরসরাই এর নদুয়ার বাজার/হাট (নদুইয়ার/নয়দুয়ারীর বাজার/হাট) যেতে হয়। এখানে আসলে ঝর্ণা আছে তিনটা। ঝর্ণা তিনটার নাম হলো কুপিকাটাকুম, মিঠাছড়ি এবং বান্দরকুম বা বান্দরিছড়া। আর ঝর্ণাগুলোতে যাওয়ার ঝিরিপথটাকে নাপিত্তাছড়া ট্রেইল বলে। নয়দুয়ারি বাজার থেকে যাত্রা শুরু করুন। চাইলে গ্রাম থেকে একজন গাইড নিয়ে নিতে পারেন, ৪০০-৫০০ টাকার মত নিবে ৪-৫ ঘন্টার জন্যে। এরপর পাহাড়ী অরণ্যে ঝিরিপথ বরাবর চলা শুরু করুন। ঝর্ণা ৩ টি বেশি দূরে নয়। ৩০/৪০ মিনিট যাওয়ার পর প্রথম ঝর্ণা কুপিকাটাকুম পেয়ে যাবেন। অনেক সুন্দর একটা ঝর্ণা। ঝর্ণাতে পানির পরিমাণও ভালোই। ঝর্ণাটির সামনের পানির অংশটি কিছুটা গভীর। তাই একেবারে ঝর্ণার সামনে যেতে হলে আপনাকে সাঁতার কেটে যেতে হবে। ঝর্ণার পানি বেশ ঠান্ডা।
কুপিকাটাকুম ঝর্ণা :
কুপিকাটাকুমে কিছুক্ষণ থাকার পর ২য় ঝর্ণা মিঠাছড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করুন। মিঠাছড়ি ঝর্ণাতে যাওয়ার সময় ছোট একটি পাহাড়ের প্রায় খাড়া একটি ঢাল বেয়ে উপরে উঠতে হয়। এসময় কিছুটা সতর্ক থাকতে হয়। যাই হোক, ঝর্ণাটি বেশ কাছেই। ২০ মিনিটের মধ্যেই মিঠাছড়ি ঝর্ণাতে পৌঁছে যাবেন। ঝর্ণাটির উচ্চতা বেশ। উপর থেকে পানি পতনের সময় অর্ধেকটা অংশ পার হবার পর দুই ভাগ হয়ে দুই দিকে পানি পড়েছে। বর্ষার সময় এই ঝর্ণাটি খুব সুন্দর দেখায়।
মিঠাছড়ি ঝর্ণা :
এখানে কিছুক্ষণ থাকার পর ৩য় ঝর্ণা বান্দরকুম বা বান্দরিছড়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করুন। প্রায় ৪০/৪৫ মিনিট ঝিরি পথ বরাবর হাটার পর ঝর্ণাটি পেয়ে যাবেন। এই ঝর্ণাটিও বেশ সুন্দর। ৩ টি ঝর্ণার মধ্যে এই ঝর্ণাটির উচ্চতা সবচেয়ে বেশি। ঝর্ণাতে যাওয়ার ঝিরি পথটা অনেক সুন্দর। তেমন কোন রিস্ক কোথাও নেই। এজন্য বর্ষার সময় আসাটাই সবচেয়ে ভাল সময়, তাহলে ঝর্ণার সর্বোচ্চ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।
বান্দরকুম ঝর্ণা :
এরপর আরো কিছু পথ পাড় হয়ে দেখা মিলবে ৩য় ঝর্ণা বান্দরকুম বা বান্দরিছড়া। এই ঝর্ণাটি সবচেয়ে উঁচু ঝর্ণা। বর্ষাকালে এই ঝর্ণা গুলোর সর্বোচ্চ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।
অনেক সুন্দর একটা ঝর্ণা। ঝর্ণাতে পানির পরিমাণও ভালোই। ঝর্ণাটির সামনের পানির অংশটি কিছুটা গভীর। তাই একেবারে ঝর্ণার সামনে যেতে হলে আপনাকে সাঁতার কেটে যেতে হবে। ঝর্ণার পানি বেশ ঠান্ডা।
কিভাবে যাবেন ?
আপনাকে চট্টগ্রামের মিরসরাই এর নয়দুয়ারি বাজার যেতে হবে। বাসে চট্টগ্রাম গেলে আপনি যাত্রার সময়ই সহজে মিরসরাই এর নয়দুয়ারি বাজার নেমে যেতে পারবেন। যদি বাসের ড্রাইভার নয়দুয়ারি না চেনে তবে মীরসরাই বাজারে নেমে সিএনজি করে নদুয়ার হাট যেতে পারবেন। জনপ্রতি ১০ টাকা নেবে লোকাল সিএনজি। কিন্তু আপনি যদি ট্রেনে করে চিটাগাং শহরে নামেন, তাহলে আবার বাসে করে প্রায় দেড় ঘন্টার উল্টা জার্নি করে আপনাকে মিরসরাই আসতে হবে। চট্টগ্রাম শহর এর অলংকার মোড় থেকে চয়েস বাস মিরসরাই যায়। ভাড়া পার পার্সন ৮০ টাকা। কিংবা ফেনীর বাসে উঠে ফেনী নেমে সেখান থেকে লোকাল বাসে মিরসরাই এর নয়দুয়ারি নামবেন। নয়দুয়ারি বাজার থেকে সোজা ৪০ মিনিটের পায়ে হাঁটার রাস্তা।
গাইড :
স্থানীয় মানুষজনকে গাইড হিসেবে নিয়ে নিতে পারেন। আপনারা আপনাদের সুবিধা মত দামে কথা বলে ঠিক করে নিবেন।
কোথায় থাকবেন ?
এই ভ্রমণ একদিনের তাই থাকার দরকার পড়বেনা তবু নিতান্তই রাতে থাকতে চাইলে মীরসরাই বা সীতাকুন্ডে নিন্মমানের হোটেল পাবেন। সীতাকুণ্ড বাজার গেলে সেখানে হোটেল সাইমুন আছে। ভালো হোটেলে থাকতে চাইলে চট্টগ্রাম চলে আসতে হবে। নয়দুয়ারি বাজারে খুঁজলে মধ্য মানের থাকার হোটেল পাওয়া যেতে পারে।
কোথায় খাবেন ?
নদুয়ারহাটে দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা নাই। এক্ষেত্রে মীরসরাই বাজারে এসে খেতে পারবেন।
সাথে যা নিতে হবে / প্রস্তুতি :
যেহেতু পাহাড়ি রাস্তা, সেহেতু সাথে কিছু ঔষধ নেয়া যেতে পারে।
কাটাছেঁড়া হতে পারে তাই কিছু ব্যান্ডেজ আর ডেটল জাতীয় এন্টিসেপটিক রাখতে হবে।
কিছু জায়গায় পাহাড় ট্র্যাক করতে হয়, সেজন্য দড়ি নিলে ভাল।
যারা সাঁতার জানেন না তারা সাথে পারলে লাইফ জ্যাকেট নিতে পারেন।
চট্টগ্রাম কিন্তু ম্যালেরিয়াপ্রবণ একটি এলাকা। সাধারণত ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকাতে যাওয়ার আগে সতর্কতা হিসেবে যাত্রা শুরুর আগের ১ সপ্তাহ থেকে যাত্রা শেষ হবার পর ৪ সপ্তাহ পর্যন্ত ডক্সিসাইক্লিন ট্যাবলেট (১০০মি.গ্রা.) খেতে হয়। তারপরও পাহাড়ী এলাকাতে যাওয়ার আগে অবশ্যই একজন ডাক্তারের সাথে কথা বলে যাবেন।